বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন

নির্যাতন ও পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে জেল খাটালো স্বামী!

খুলনা ব্যুরো::

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়, অতঃপর বিবাহের খেশারত দিতে হচ্ছে গৃহবধূ ও খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটির অনার্সের মেধাবী ছাত্রী উমাইয়া রহমানকে। যৌতুকের দাবিতে দিনের পর দিন স্বামীর নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। তবে, সর্বশেষ স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্বাশুড়ীকে মারধরের দায়ে ফাঁসানো হয়েছে তাকে। এমনকি তার দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানসহ তাকে জেলও খাটানো হয়েছে। উপরন্তু বর্তমানে এ মামলা তুলে নিতে প্রবাসী শ্বশুরের কাছে সে আরও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও যৌতুক দাবি এবং দেনমোহর ও খোরপোষ আদায়ের জন্য স্ত্রী বাদি হয়ে স্বামী পিয়াল হাসানের বিরুদ্ধে খুলনার আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীতে বসবাসরত আমেরিকা প্রবাসী ওবায়দুর রহমানের কন্যা উমাইয়া রহমানের সঙ্গে ফেসবুকে নরসিংদি জেলার পলাশ থানার বালুচর পাড়ার মমিন উল্লাহ’র পুত্র পিয়াল হাসানের পরিচয় ঘটে। তার পর থেকেই পিতার অর্থ সম্পদ দেখে উমাইয়াকে বিয়ে করার জন্য পিয়াল প্রেমের ফাঁদ পাতে। উমাইয়া ওই সময় খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটির (ইংলিশ) অনার্সের প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। কোন পুত্র সন্তান না থাকায় দু’ কন্যার বাবা ওবায়দুর রহমান মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক মেনে নেন। পারিবারিক সম্মতিতে ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় পিয়ালকে প্রায় ১০ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিয়ের পর থেকে পিয়াল তার স্ত্রীকে নিয়ে খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী তাদের দাম্পত্য জীবনে আদিয়াত হাসান আয়ান নামে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

এদিকে, এরই মধ্যে ব্যবসার কথা বলে স্বামী পিয়াল তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে বেশ কিছু অর্থ হাতিয়ে নেয়। এরপরও সে ঢাকার গাজীপুরে গার্মেন্টস ব্যবসার জন্য ২০১৮ সালের জুন মাসে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। জামাইকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে ওই সময় শ্বশুর তাকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান করে। টাকা নিয়ে সে গাজীপুরের পশ্চিম টঙ্গীপাড়া থানার আউচপাড়ার সুরতরঙ্গ রোডে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। এমনকি জনৈকা জামিলা খাতুন নদী নামে একটি মেয়ের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে বলেও অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি স্ত্রী তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে জানালে তারাও পিয়ালের বিষয়ে কোনরূপ টু-শব্দ করতে পারেনি।

গৃহবধূ উমাইয়া রহমান অভিযোগ করেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি তার মা-বাবা ও শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুরে পিয়ালের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে নদী নামক ওই মেয়েকে তার রুমে দেখতে পেয়ে তার পরিচয় জানতে চান। এ সময় নদী উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে সে রান্না ঘর থেকে খুনতি এনে তাকে আঘাতের চেষ্টা করলে তার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে নদী’র দেয়া খুনতির আঘাতে তিনি জখম হন। ওই ঘটনায় স্বামী পিয়াল তার নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে স্ত্রী উমাইয়া ও তার মা ফারহানার পারভীনের বিরুদ্ধে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে। একই সঙ্গে পুলিশকে দিয়ে নিজের দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ তাদের গ্রেফতার করিয়ে কারাগারে প্রেরণের ব্যবস্থাও করা হয়। পরে তারা আদালত থেকে জামিনলাভ করেন।

এদিকে, পিয়ালের মা হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয়ে চলাফেরা করেন। কিন্তু গত ৭ মে তিনি পুণরায় অসুস্থ্য হয়ে মারা যান। এখন যৌতুকলোভী পিয়াল তার মায়ের মৃত্যু ও ওই মামলাকে পুঁজি করে আবারও তাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। টাকা পেলে সে মামলা তুলে নেবে, অন্যথায় আবারও তাদের জেল খাটানোসহ নানা ধরণের হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন স্ত্রী উমাইয়া রহমান। সর্বশেষ স্ত্রী উমাইয়া স্বামী পিয়ালের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও যৌতুক নিরোধ আইন এবং দেনমোহর ও খোরপোষ আদায়ের জন্য সম্প্রতি খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম ও পারিবারিক আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দু’টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com